পাবনার ভাঙ্গুড়ায় সাবিনা খাতুন (৩৫) নামে এক গৃহবধূ মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তিনি জেলার ফরিদপুর উপজেলার বিএলবাড়ি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমানের মেয়ে এবং ভাঙ্গুড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের হাংড়াগাড়ি গ্রামের দিনমজুর হাফিজুল ইসলামের স্ত্রী।
সাবিনার পরিবারের দাবি, কিস্তির টাকা শোধের জন্য এনজিও থেকে চাপাচাপি করায় তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। অভিযুক্ত এনজিওর কর্মকর্তারা বলেন, তাদের ২ মাঠকর্মী মঙ্গলবার সকালে সাবিনার বাড়ি গিয়েছিলেন তবে কিস্তি পরিশোধের জন্য কোনো চাপ দেননি।
বিজ্ঞাপন
স্বজনরা জানান, দিনমজুর হাফিজুল ইসলাম গত বছরের আগস্ট মাসে তার স্ত্রী সাবিনা খাতুনের নামে সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট ইনোভেশন অ্যান্ড প্রাক্টিসেস (সিদীপ) এনজিও ভাঙ্গুড়া শাখা থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে হাফিজুল ইসলামের আয় রোজগার কমে যায়। এ অবস্থায় গত পাঁচ মাসের কিস্তিও বকেয়া পড়ে যায় ওই দম্পতির।
মঙ্গলবার সকালে সিদীপ এনজিওর দু’জন মাঠকর্মী কিস্তি আদায়ের জন্য হাফিজুলের বাড়িতে যান। এ সময় হাফিজুল বাড়িতে ছিলেন না। এনজিও কর্মীরা সম্পূর্ণ বকেয়া কিস্তির টাকা পরিশোধ করার জন্য সাবিনাকে চাপ দেন। এ নিয়ে এনজিও কর্মীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় সাবিনার। এরপর এনজিও কর্মীরা শাসিয়ে চলে যান। এতে লজ্জায়-অপমানে দিশেহারা হয়ে যান সাবিনা।
বিজ্ঞাপন
তিনি দুপুরে দিকে ঘরে গিয়ে ফাঁস দেন। বিষয়টি পরিবারের লোকজন টের পেয়ে তাকে উদ্ধার করে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাবিনার জা (দেবরের স্ত্রী) শেলী খাতুন জানান, কিস্তি আদায়ের স্যাররা (মাঠকর্মী) আমার ভাসুরের স্ত্রীর কাছে কিস্তির টাকা আদায় করতে আসে। এ সময় আমার জা জানায় কিস্তি দিতে দেরি হবে। তখন কিস্তি আদায়ের স্যাররা তাকে নানা কথা শোনায়। তারা চলে যাওয়ার পর সাবিনা ঘরে গিয়ে সবার অজান্তে ফাঁস দেয়। তাকে কিছুক্ষণ পর উদ্ধার করা হলেও তিনি মারা যান।
সিদীপের ব্যবস্থাপক মাহমুদুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই গৃহবধূ নিজে থেকেই কিস্তির টাকা পরিশোধের জন্য মাঠকর্মীদের ডেকেছিলেন। তাই তার বাড়িতে কর্মীরা গিয়েছিলেন। এ নিয়ে তার সঙ্গে আমাদের কোনো কর্মীর রাগারাগি বা বাকবিতণ্ডা হয়নি।
এ ঘটনায় ভাঙ্গুড়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল কাদের বলেন, হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। থানায় একটি অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, কিস্তি দিতে না পারায় গৃহবধূর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে থাকলে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। সরকারি নির্দেশ অমান্য করে কিস্তির জন্য চাপ দেয়া আইন বিরোধী কাজ। ওই অভিযুক্ত এনজিও কর্মীরা সত্যি চাপ দিয়ে থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পাঠকের মতামত: